ইব্রাহিমি চুক্তি : বুদ্ধিবৃত্তিক ষড়যন্ত্রের নতুন জাল!!
Abrahamic accords বা ইব্রাহিমি চুক্তির মূল অর্থ হল যেহেতু মুসলমান ইহুদি ও খ্রিস্টান এই তিন সম্প্রদায়ই হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে পদপ্রদর্শক মানে, তাই তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা থাকা উচিত।কিন্তু বাস্তবে এখন এই পরিভাষাটি কেবল একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে তা-হলো মুসলমান ও আরব সরকারগুলো যেন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে তার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করে।একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠা রাজনৈতিক শক্তি ‘চীন’ এর মোকাবেলায় আমেরিকান জোটকে শক্তিশালী করে মুসলমান ও আরব সরকার গুলোকে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানো।
‘ ইব্রাহিমি চুক্তির যাত্রা….
আমাদেরকে কিছুটা পেছন থেকে শুরু করতে হবে।
প্রথমে আমরা জানব এই কথিত ইব্রাহিমি চুক্তি র শুরুটা আসলে কী! কিভাবে বাস্তবতার মুখ দেখল এই চুক্তি।
প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের এই যুগে সম্মুখ লড়াই যতটা হচ্ছে তারচেয়ে দিগুণ হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই!
ইব্রাহিমি চুক্তি টাও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের নতুন সংযোজন।
এই ‘ ইব্রাহিমি চুক্তি ‘ র জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল খুবই চমকপ্রদ দুটি শব্দ।
১: এক উম্মাহ
২: ইবরাহীমি পরিবার
মূল লক্ষ্যে পৌঁছাতে বহুদিন ধরে পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। এজন্য বিশ্বের বড় বড় সেমিনার এবং গবেষণার স্থলগুলোতে বরাবরই চেষ্টা চলছিল মুসলমান ইহুদি খ্রিস্টান একে অপরের নিকটবর্তী কিভাবে করা যায়। এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে এমন একটি ন্যারাটিভ প্রতিষ্ঠা করা হলো যে, যেহেতু এই তিন ধর্মই হযরত ইব্রাহিম আলাইহি সালামকে নিজেদের পথ প্রদর্শক মানে তাই তারা একই পরিবারের সদস্য। এজন্য প্রথমত এই নীতি চালু করার চেষ্টা করা হলো যে, যদি কোন রাষ্ট্রে বহু ধর্মের লোক বসবাস করে তবে তারা রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এক উম্মহ বলে গণ্য হবে।
দ্বিতীয়ত এই তিন ধর্মের জন্য “ইব্রাহিমি পরিবার” শব্দবন্ধ তৈরি করা হলো অর্থাৎ মুসলমান ইহুদী ও খ্রিস্টান সবাই একই পরিবারের সদস্য এবং সবাই ইব্রাহিম আলাইহি সাল্লাম এর অনুসারী। এর পরিণামে এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলো যে,
এ ধর্মগুলোর মধ্যে সত্য মিথ্যার কোন বিরোধ নেই। যেহেতু সবাই ইব্রাহিম আলাইহি সাল্লাম এর অনুসারী তাই ধর্মীয় ভিত্তিতে কাউকে আলাদা বা ভিন্ন মনে করার প্রয়োজন নাই। এই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ফলাফল দাঁড়ালো এভাবে যে, সব ধর্মই সমানভাবে সত্য এবং মুক্তির জন্য এদের মধ্যে বিশেষ ধর্মকে অপরিহার্য ধরা যায় না অর্থাৎ সেই বাতিল মতবাদ তথা “সব ধর্ম এক” এই মতবাদ প্রচার করা হলো।
ফলাফল…
এক উম্মাহ এবং পরিবার এ পরিভাষার ফলস্বরূপ আমেরিকার তত্ত্বাবধানে ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকটি মুসলিম সরকারকে ইবরাহিমি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করে। যার ফলে তথাকথিত ইব্রাহিমি পরিবার এর মাত্র একটি দেশ অর্থাৎ ইসরাইল নিজের অবস্থানকে বৈধতা দিতে সক্ষম হয়। প্রতারণা,ধোঁকাবাজি এবং নিরীহ মানুষের হত্যার মাধ্যমে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এই একই ইব্রাহিমি পরিবার এর অন্য সদস্য যারা ফিলিস্তিনের আদিবাসী মানুষ তাদের বিষয়টি তত দিন অমীমাংসিত রাখা হবে ইসরাইল যতদিন চাইবে।
স্বাক্ষরকারী দেশ…
এই চুক্তিতে একাধিক আরব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন মরক্কো ও সুদান স্বাক্ষর করেছে তবে সৌদি আরব এখনো স্বাক্ষর করেনি। বরং কিছুটা ন্যায়সঙ্গত অবস্থান নিয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আল কুদুসকে রাজধানী ঘোষণা করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্থাপিত না হবে, ততক্ষণ তারা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না।
ইতিমধ্যে বিশ্বের নানা বোদ্ধামহল থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। এবং চুক্তিটি কে মানবাধিকার লংঘনকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
একটা বিষয় খুবই স্পষ্ট যে, ইসলামবিরোধীরা যখনই মুসলমানদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে, তখনই তারা বেছে নিয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের এই ময়দান। যেমনটা হয়েছিল ভূস্বর্গ কাশ্মীরের সাথে তেমনটাই আজ হচ্ছে ফিলিস্তিনের সাথে।
আমরা চাই আমাদের আর কোনো ভূখণ্ড এই গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার না হোক এবং আর কোন অঞ্চল নির্যাতিত নির্মম ফিলিস্তিনের মতো উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত না হোক। এজন্য প্রয়োজন এখন থেকেই আমাদের গণসচেতনতা তৈরি এবং প্রচন্ড শক্তিমত্তার সাথে বুদ্ধিভিত্তিক লড়াইয়ের এই ময়দানে অংশগ্রহণ।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ মুয়াজ
শিক্ষার্থী উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা
সাবেক শিক্ষার্থী মাদরাসা আবু হুরায়রা রাযিঃ কিশোরগঞ্জ।
তথ্যসূত্র: মাসিক বালাগ ( দারুল উলুম করাচী, আগষ্ট সংখ্যা) এর অবলম্বনে প্রস্তুতকৃত।