অহেতুক কথাবার্তা বর্জন করা সফলতার গোপন রহস্য
পৃথিবীর প্রতিটা মানুষেই সফল হতে চায় কিন্তু পদে পদে নানা বাঁধা বিপত্তিতে আটকে যায়।তখনই ধমকে দাঁড়ায় তার সকল স্বপ্ন আর সম্ভাবনা।
তখন মানুষ একের পর এক ভুল করতে শুরু করে।চলতে শুরু করে ভুল পথে। হারিয়ে যায় বহুদূর। এমনকি সফলতার স্বপ্নও ভেঙে যায়।সে আর ঘুরে দাড়াতে পারে না। তখন শুরু হয় রাজ্যের বিষন্নতা। একসময়....!
আজ আমরা আলোচনা করব জীবনের সফলতার একটি গোপন রহস্য নিয়ে।যার শিরোনাম দিয়েছি
" অহেতুক কথাবার্তা বর্জন করা সফলতার গোপন রহস্য "।
আরবী শব্দ ' লাঘউন' অর্থ হল অনর্থক কথা বা কাজ ইত্যাদি।
এটা দুনিয়াবি ক্ষেত্রে যেমন হতে পারে পরকালীন বিষয়েও হতে পারে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই ইসলাম এটাকে সাপোর্ট করে না।বরং সবসময় নিরুৎসাহিত করে।
যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“একজন মানুষের ইসলামের সৌন্দর্যের অংশ হলো —অহেতুক বিষয় বর্জন করা ”।
(তিরমিজি, হাদিস: 2318)
আল্লাহ তায়ালা সূরা মুমিনের ১-৩ নং আয়াতে খুব স্পষ্টভাবেই এই আলোচনার উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন " অবশ্যই মুমীনীন সফলকাম হয়েছে। ( ওই সকল মুমীন) যারা একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করে। আর যারা অনর্থক কথা/ কাজ থেকে বিমুখ থাকে"।
এখন আমাদের বুঝতে হবে প্রকৃত সফলতা কাকে বলা হয়? এব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন "যাকেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে সে-ই প্রকৃত সফলকাম।
(সূরা আলে ইমরান:১৮৫)
আর এই ' লাঘউন' তথা মন্দ কাজ বা কথা এতটাই গর্হিত বিষয় যে এর নিন্দা বুঝাতে আল্লাহ তা'আলা বলেন:
(মুমীনীন প্রকৃত সফল হওয়ার পর) জান্নাতে আর অনর্থক কথা শুনবে না। ( সূরা নাবা:২৫)
এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
বান্দা চিন্তা-ভাবনা ছাড়া এমন কথা বলে ফেলে, যার কারণে সে (পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব পরিমাণ) জাহান্নামের অতলে নিক্ষিপ্ত হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭৭
অপর এক হাদীসে এসেছে
হযরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ আসসাকাফী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ...আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, আমার কোন্ বিষয়ে আপনি সবচেয়ে বেশি আশংকা করেন। তখন তিনি নিজ জিহ্বা ধরলেন এরপর বললেন, এটা। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৪১৯
এর বিপরীতে ইসলাম সবসময় আদেশ ও উৎসাহ প্রদান করে সত্য-সঠিক এবং উত্তম কথা বলার।
আল্লাহ তায়ালা বলেন :
হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য -সঠিক কথা বল।( আহযাব:৭০)
আরো বলেন : তোমরা উত্তম কথা বল।( বাকারা:৮৩)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহ প্রদান করেন এই বলে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। -(সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০১৮)
অতএব আমরা চেষ্টা করব সবসময় সত্য এবং সঠিক কথা বলতে।অহেতুক কথা থেকে বেঁচে থাকতে। আর নাহয় চুপ থাকব।এতেও রয়েছে আমাদের সমূহ কল্যাণ।যেমনটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:যে চুপ থাকে সে বেঁচে যায়।
(জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫০১)
আরো বলেন: যে তার যবান ও লজ্জাস্থান হেফাযতের যামানত দিতে পারবে, আমি তার জান্নাতের যামিন হব। -(সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭৪)
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবী ওকবা ইবনে আমের রা.-কে তিনটি ওসিয়ত করলেন। এর প্রথমটি ছিল-
"তুমি তোমার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখ"।
(জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪০৬)
এব্যাপারে সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-
সেই সত্তার কসম, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ভূপৃষ্ঠে সবকিছুর চেয়ে জিহ্বাই সবচেয়ে বেশি বন্দিত্ব ও নিয়ন্ত্রণের মুখাপেক্ষী। -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, বর্ণনা ৮৭৪৪; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, বর্ণনা ১৮১৮৪
এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শও ছিল এটি। যেমন বর্ণিত হয়েছে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘসময় চুপ থাকতেন এবং কম হাসতেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৮১০
চিন্তা-ভাবনাহীন অনর্থক কথাবার্তা কখনো কখনো আমাদের পরস্পরেও ঝামেলার কারণ হয়ে দাড়ায়। কখনো দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করে।
যেমনটা এক কবি এভাবে ফুটিয়ে তুলেন,অর্থ- "বর্শার ফলার আঘাতের উপশম হয়। তবে যবানের আঘাতের কোনো উপশম নেই"।
তাই আমাদের উচিত সবসময় অহেতুক কথাবার্তা বর্জন করে চলা এবং সত্য - সঠিক ও উত্তম কথাবার্তা বলা।অন্যথায় চুপ থাকা।
এতেই আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ মুয়াজ
শিক্ষার্থী, উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ, বসুন্ধরা। সাবেক শিক্ষার্থী মাদরাসা আবু হুরায়রা রাযিঃ।