প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ১১:৪৩ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ৯:৪০ পি.এম

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের, যিনি ঘোষণা করেছেন: "যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদের তোমরা মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট তারা জীবিকা লাভ করে।"
আমার এই ওসিয়ত রেখে গেলাম—যা বিদায়ের কোন ঘোষণা পত্র নয়, বরং পূর্ণ প্রত্যয়ে নির্বাচিত এক পথের অবিরাম যাত্রা।
আমার প্রভু জানেন, আমি আমার সামর্থ্যের শেষ কণাটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি, যেন আমি আমার জাতির সন্তানের কণ্ঠস্বর ও অবলম্বন হতে পারি। আমি জীবনের প্রতিটি পরতে এই বেদনা আর বঞ্চনার স্বাদ নিয়েছি; বারে বারে প্রিয়জন হারানোর দহন আমাকে স্পর্শ করেছে। তবুও, সত্যের মশাল হাতে নিয়ে আমি কখনো থামিনি। এই সত্য—যা থাকবে সকল নীরবতা ও দুর্বলতার বিরুদ্ধে এক অকাট্য দলিল, আর গাজার এই শ্রেষ্ঠ মানুষদের পাশে দাঁড়ানো সকলের জন্য এক অক্ষয় সম্মানের মুকুট।
যদি আমার শাহাদাত ঘটে, তবে জেনে রেখো—আমি বিলীন হইনি,আমি এখন জান্নাতের আঙিনায়, সেই অগ্রগামী কাফেলার সাথী;আনাস, ইসমাইল এবং সেইসব প্রিয় আত্মার মাঝে, যারা আল্লাহর সাথে করা শপথ সত্য প্রমাণ করেছে।
তোমাদের কাছে আমার মিনতি: তোমরা আমাকে তোমাদের দু'আয় জিইয়ে রেখো এবং আমার এই পথচলা তোমরা থামতে দিও না। আমাকে স্মরণ করবে সদকায়ে জারিয়ায়, আর স্মরণ করবে যখনই তোমরা আযান শুনবে, অথবা গাজার রাত্রির বুক চিরে যখন ভোরের আলো ফুটবে।
আমি তোমাদের কাছে রেখে গেলাম প্রতিরোধের উত্তরাধিকার...
যে পথে আমরা হেঁটেছি, যে আদর্শকে আমরা হৃদয়ে ধারণ করেছি। কারণ এই পথ ছাড়া জীবনের অন্য কোনো ঠিকানা আমরা খুঁজে পাইনি, আর এই পথে অবিচল থাকা ছাড়া জীবনের কোনো অর্থও ছিল না।
আমার সম্মানিত আব্বাজান, আপনি আমার হৃদয়ের স্পন্দন ও আমার পথপ্রদর্শক, যাঁর মাঝে আমি নিজেকে দেখতাম। হে আমার মাথার তাজ, যুদ্ধের প্রতিটি মুহূর্তে আপনি আমার পাশে ছিলেন। আল্লাহর কাছে আমার মিনতি, যেন তিনি আমাদের জান্নাতে সন্তুষ্ট অবস্থায় মিলিত করেন।
আমার প্রিয় ভাই, শিক্ষক ও সহযাত্রী নাজি,
হে নাজি! তোমার কারাগার থেকে মুক্তির আগেই আমি আল্লাহর দিকে যাত্রা করলাম।
জেনে রাখো, এটি আল্লাহরই বিধান, আর তোমার জন্য আমার ভেতরে যে আকুলতা, তা শান্ত হওয়ার নয়।
আমি চেয়েছিলাম তোমাকে দেখতে, একবার বুকে জড়িয়ে ধরতে... কিন্তু আল্লাহর ওয়াদা সত্য; আর জান্নাতে আমাদের মিলন তোমার ভাবনার চেয়েও কাছে।
আমার প্রাণপ্রিয় মা...
ওহ্ মা! তোমাকে ছাড়া জীবন অর্থহীন।তুমি ছিলে আমার জন্য সেই অফুরন্ত দু'আ, সেই স্বপ্ন যা কখনো মরেনি।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যেন তিনি তোমাকে রোগমুক্ত করেন।আমি স্বপ্ন দেখতাম—তুমি চিকিৎসার জন্য যাবে এবং হাসিমুখে ফিরে আসবে।
আমার ভাই-বোনদের প্রতি...
আল্লাহর সন্তুষ্টি, তারপর তোমাদের সন্তুষ্টি—এটাই ছিল আমার জীবনের লক্ষ্য।
আল্লাহ তোমাদের সুখী করুন, আর তোমাদের জীবনকে তোমাদের স্নিগ্ধ হৃদয়ের মতোই পবিত্র ও শান্তিময় করুন। আমি সবসময় চেয়েছি তোমাদের আনন্দের উৎস হতে।
আমি সবসময় বলতাম:একটি শব্দও যেন বাদ না পড়ে, একটি ছবিও যেন ছুটে না যায়।
কারণ শব্দ একটি আমানত, আর ছবি হলো বার্তা—
আমরা যেমন করে বহন করেছি, তোমরাও তেমনি করে তা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেবে।
আমার শাহাদাতকে তোমরা শেষ মনে করো না,
বরং এটি স্বাধীনতার এক সুদীর্ঘ পথের সূচনা।
আমি এক বার্তার দূত—যা পৌঁছানো দরকার ছিল পৃথিবীর কাছে, সেইসব চোখ বুজে থাকা মানুষের কাছে, যারা সত্য দেখেও নীরব।
আর তোমরা যদি আমার শাহাদাতের খবর শোনো, তবে আমার জন্য অশ্রু ঝরিও না। আমি দীর্ঘকাল ধরে এই মুহূর্তটির প্রতীক্ষা করেছি, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যেন তিনি আমাকে এটি দান করেন।
অতএব, সমস্ত প্রশংসা সেই মহান সত্তার, যিনি তাঁর পছন্দের জন্য আমাকে নির্বাচন করেছেন।
আর যারা জীবনে আমাকে গালি দিয়ে, মিথ্যা অপবাদ বা অপপ্রচারের মাধ্যমে কষ্ট দিয়েছে, তাদের বলছি: আমি আল্লাহর ইচ্ছায় শহীদ হয়ে তাঁর কাছে চলে যাচ্ছি - আল্লাহর দরবারেই সমস্ত প্রতিপক্ষের ফায়সালা হবে।
আমি তোমাদের কাছে ফিলিস্তিন-এর ওসিয়ত রেখে গেলাম..মসজিদে আকসা-র ওসিয়ত...
আমার স্বপ্ন ছিল এর প্রাঙ্গণে পৌঁছানো, সেখানে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা, এর পবিত্র মাটি স্পর্শ করা।
যদি দুনিয়াতে সেখানে পৌঁছাতে না পারি,
তবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা—তিনি যেন আমাদের সকলকে জান্নাতের চিরস্থায়ী বাগানে একত্র করেন।
হে আল্লাহ, আমাকে শহীদদের মাঝে কবুল করো, আমার অতীতের ও ভবিষ্যতের সব গুনাহ ক্ষমা করো, এবং আমার রক্তকে আমার জাতি ও স্বজনদের মুক্তির পথে আলোর দিশা করে দাও।
যদি কোনো ত্রুটি করে থাকি, তবে ক্ষমা করো, আর আমার জন্য দয়া ও ক্ষমার দু'আ করো। আমি আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে গেলাম—আমি পরিবর্তন করিনি, পথভ্রষ্ট হইনি।
তোমাদের প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
তোমাদের ভাই, আল্লাহর ইচ্ছায় শহীদ।
সালেহ আমের ফুয়াদ আল-জাফরাওয়ি
১২/১০/২০২৫
সংগ্রীহিত