সুগন্ধি ব্যবহার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ
পৃথিবী পরিবর্তনশীল।পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষ থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রাণীর আচার ব্যবহার চালচলন জীবনাচারও তেমন পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচি ও চাহিদাতেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।প্রতিটা প্রাণীই নিজেকে অন্যের সামনে সুন্দর থেকে সুন্দর রূপে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করে সবসময়। আর এজন্য ব্যবহার করে নানা ধরনের প্রসাধনী, পারফিউম সহ সাজসজ্জার নানা আসবাবপত্র। আজ থেকে একশ বছর পূর্বে যে পারফিউম টা ছিল ব্র্যান্ড, আজ হয়ত তার দিকে তাকানোর মত সময়টুকু কারো নেই।পৃথিবী অগ্রসরমান।প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলছে। আপডেট হচ্ছে। একশ বছর পূর্বের পারফিউম আজ অবহেলিত। বাজারে এসেছে নামীদামি ব্র্যান্ডের সকল প্রসাধনী আর পারফিউম। একে ঘিরেই গড়ে উঠছে শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান।
তবে একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত প্রসাধনী
" সুরমা আর আতর" আজও সেই পূর্বের গ্রহণযোগ্যতাই ধরে রেখেছে সমানতালে। সামান্যও চির পড়েনি তাতে।তার এই গ্রহণযোগ্যতার পিছনে সবচে বড় চালিকাশক্তি হল ইসলামি শরিয়াহর গুরুত্বপ্রদান এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহান আদর্শ। মানুষের জীবন সংশ্লিষ্ট এই ক্ষুদ্র জিনিসটুকুর গুরুত্বও দিয়েছে ইসলাম। যেমন মহানবী সাঃবলেন: তোমরা ইসমিদ( সুরমা) ব্যবহার কর।যা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে এবং চুল গজাতে সহায়ক হয়।
(শামায়েলে মুহাম্মাদিয়্যা -৪৯)
শুধু যে উৎসাহ দিয়েছেন তাও নয় বরং নিজের বাস্তব জীবনেও তার প্রাকটিস করে গিয়েছেন।হযরত আব্বাস রাযিঃ বলেন : নবীজি সাঃ এর একটি সুরমাদানী ছিল।প্রতি রাতেই তিনি এ চোখে তিনবার এবং অপর চোখে তিনবার সুরমা ব্যবহার করতেন।(তিরমিজি -১৭৫৭)
তেমনিভাবে সুগন্ধি 'আতরের' ব্যাপারেও কথা বলেছে ইসলাম। রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজেও খুব যত্ন সহকারে আতর ব্যবহার করতেন।আনাস রাযি: নিজ বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন যে,রাসুলুল্লাহ সাঃ এর একটি আতরদানি ছিল, যেখান থেকে তিনি আতর ব্যবহার করতেন।
( শামায়েলে মুহাম্মাদিয়্যা-২১২)
এবং রাসুলুল্লাহ সাঃ আতর ব্যবহারে অন্যদেরও উৎসাহ প্রদান করতেন। উসমান নাহদী রাযি: বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমাদের কাউকে যদি সুগন্ধি হাদিয়া প্রদান করা হয়, সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়।কেননা তা ( এসেছে) জান্নাত থেকে।
( শামায়েলে মুহাম্মাদিয়্যা- ২২১)
রাসুলুল্লাহ সাঃ প্রতি জীবন উৎসর্গকারী সাহাবায়ে কেরামও নিজেদের জীবনে সবসময় রাসুলের আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটাতে চাইতেন।আনাস রাযিঃ থেকে বর্ণিত যে,তিনি কখনো সুগন্ধি ফিরিয়ে দিতেন না।এবং তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজেও কখনো সুগন্ধি-র( হাদিয়া) ফিরিয়ে দিতেন না। ( বুখারী-৫৯২৯)
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহর অনুসরণে আমরা নিজেরাও ভালো মানের আতর আর সুরমা আমাদের প্রসাধনীর অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।কারণ এটি রাসুল সাঃ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। যে রাসুলের আদর্শের মাঝেই রয়েছে আমাদের ইহকালীন এবং পরকালীন মুক্তি।
এখানে স্মর্তব্য যে,সুরমা নিয়ে আমাদের সমাজে কিছুটা ভুল ধারণাও প্রচলিত রয়েছে। যেমন মুসা আঃ আল্লাহর সাক্ষাৎ এ গিয়েছিলেন। তখন আল্লাহ তায়ালার নূরের তাজাল্লিতে তূর পাহাড় জ্বলে সুরমায় পরিণত হয়।এটি একটি ভুল ধারণা। এধরণের কোনো প্রমাণ কুরআন-হাদীসে পাওয়া যায় না। তবে তূর পাহাড়ে আল্লাহ তায়ালার সাথে মুসা আঃ এর সাক্ষাৎ হয়েছিল এটা নিশ্চিত। যার বর্ণনা স্বয়ং কুরআনেই রয়েছে।
(সূরা আরাফ-১৪৩)
আমরা বিভিন্ন ভিআইপি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করলে যেমন পারফিউম ব্যবহার করি তেমনি আমরা যখনই কোনো লোকসমাগমস্থল বিশেষত মসজিদে যাই তখন আমাদের উচিত আতর-সুরমা ব্যবহার করা।এতে নিজের মধ্যে যেমন প্রফুল্লতা অনুভব হবে তেমনি আল্লাহর হুকুম পালনে আমাদের পুণ্য অর্জনেরও উসিলা হবে।আল্লাহ তায়ালা বলেন : তোমরা যখন মসজিদে গমন কর তখন পরিপাটি হয়ে সাজসজ্জার সঙ্গে গমন কর।(আরাফ-৩১)
এবং সুগন্ধি ব্যবহরের ফলেও মানুষও আমাদের কষ্ট থেকে বেচে যাবে।যেমন অনেক সময় আমরা ঘর্মাক্ত হওয়ায় দুর্গন্ধের উদ্রেক হয়। তখন সকলেরই কষ্ট হয়।আর লোকদেরকে কষ্ট না দেওয়া এটাও একটা স্বতন্ত্র ইবাদত। যেমন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে,অপর মুসলিম ভাইকে কষ্ট দেওয়াও গোনাহ।(মুসনাদে আহমদ -১৬৮১৯)
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণে ছোট্ট একটি আমল ' আতর- সুরমা' ব্যবহার দ্বারাও আমরা নিজেদের পরকালীন মুক্তির পাথেয় গ্রহণ সঞ্চয় করতে পারি খুব সহজেই।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ মুয়াজ
শিক্ষার্থী উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা