সালাত: কনভারশেসন উইথ আল্লাহ
৮০০'শ কোটি মানুষের এই পৃথিবীকে আজ আমাদের সামনে 'ওয়াল্ড ভিলেজ' তথা 'বিশ্বগ্রাম' হিসাবে উস্থাপন করা হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে পৃথিবী কথাটা অগ্রসর।
শত তলা ভবন, আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবকিছুই আমাদের আয়ত্বে!
মানুষ ঘরে বসেই সেরে নিতে পারছে প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম।
গ্রাম-শহর, নগর থেকে রাষ্ট্র শুধুই উন্নতির জোয়ার।
তবে বাস্তবতা হলো এ সবকিছুই মুদ্রার একপিঠ। যার অপরপিঠ কে সবসময় আমাদের থেকে আড়াল করে রাখা হয়।যেখানে রয়েছে রাজ্যের অন্ধকার। সেই বাস্তবতা হার-হামেশা ধোয়াশায় ছেঁয়ে থাকে।
মানসিক অশান্তি, পারিবারিক- কলহ,একাকীত্ব ,আত্মহত্যা এসব কিছুই হলো মুদ্রার অপরপিঠ। হু হু করে বাড়ছে মানসিক হাসপাতাল এবং বিভিন্ন মানসিক সহায়তা সংস্থার পরিমাণ।
আমরা কখনো ডিপ্রেশনের মুখোমুখি হলেই তাড়াহুড়ো করে ছুটে যাই এসব সহায়তা কেন্দ্রে।শরণাপন্ন হই বিভিন্ন সাইকোলজিস্টদের।অনলাইন জগতেও ঘন্টার পর ঘন্টা স্কীল করি একটু মানসিক প্রশান্তির খোঁজে।কোনো মোটিভেশনাল লেকচারের আশায়।এগুলোতেই খুঁজে বেড়াই সমাধানের পথ।অথচ আমরা উদঘাটন করতে পারি না বা করতে চাইনা এসবের মূল রহস্য! ছুটে যাই না সেই মহান সৃষ্টিকর্তার তরে, যার ইচ্ছায় আমরা বিপদের সম্মুখীন হয়েছি।
অথচ বিপদ-আপদ, দুঃখ কষ্ট সবকিছুই এসেছে তাঁর তরফ থেকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : অবশ্যই আমি তোমাদেরকে কিছুটা ভয়,ক্ষুধা, জান ও মালের ক্ষতি ও ফসলাদী বিনষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করব।আর সুসংবাদ সবরকারীদের জন্যে।
( সূরা বাকারা:১৫৫)
পাশাপাশি সেই মহান সৃষ্টিকর্তাই দিয়েছেন এই সমূহবিপদ থেকে উদ্ধারের প্রেসক্রিপশন।আমাদের প্রশান্তির জন্য দিয়েছেন সালাতের মহান বিধান। যেখানে প্রশান্তির ফল্গুধারা বয়ে চলে।হয় রহমতের বারিবর্ষণ। নেমে আসে রাজ্যের প্রশান্তি।
কারণ সালাতের মাধ্যমে আমরা সুযোগ পাই আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেদেরর সকল দুঃখ যাতনা তুলে ধরতে।
আর তিনিও পরম মমতার সাথে আমাদের সমাধান বাতলে দেন।প্রশান্তির সরল পথ দেখিয়ে দেন।
যেমনটা এক হাদীসে কুদসীতে
আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি সালাতকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক করে ভাগ করেছি। আর বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে।
অতঃপর বান্দা যখন বলে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য। আল্লাহ তা’আলা এর জবাবে বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।
সে যখন বলে, তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার গুনাবলী বর্ণনা করেছে, গুণগান করেছে।
অতঃপর সে যখন বলে, কর্মফল দিবসের মালিক। তিনি বলেন, আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছে। আর কখনো বলেছেন, আমার বান্দা (তার সব কাজ) আমার উপর সোপর্দ করেছে।
সে যখন বলে,আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। তিনি বলেন- এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। যখন সে বলে, আমাদের সরল পথ প্রদর্শন কর, তাদের পথে যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছ, যারা ক্রোধ নিপতিত নয়, পথভ্রষ্টও নয়। তখন তিনি বলেন, এটা কেবল আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দা যা চায় তা সে পাবে।(সূরা ফাতিহা:১-৭)
( সূরা ফাতেহায় আল্লাহর সাথে কনভারসেশন)
এবং অপর এক আয়াতে বলেন, হে মুমীনীন!তোমরা ধৈর্য্য এবং সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সবরকারীদের সাথে রয়েছেন।
(সূরা বাকারা:১৫৩)
আহ! কত প্রশান্তির মর্ফুলা।যেই মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমরা দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হই, সেই রব ই আমাদের পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন। তোমরা আমার কাছে ফিরে এসো,আমার নিকটবর্তী হও।সকল যাতনার কথা শেয়ার কর আমার সাথে, তোমার সকল অব্যক্ত বেদনা আমি শুনব।শান্তির ঠিকানা দেখিয়ে দিব।
আর সেই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি যাওয়ার একমাত্র পথ হল সালাত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: বান্দা তখনই তার রবের সবচে নিকটবর্তী হয়,যখন সে তার মাথা মহান রবের কদমে ঝুঁকিয়ে দেয়।
(সহীহ মুসলিম :৪৮২)
প্রিয় মুসলিম উম্মাহ! মানসিক হাসপাতাল বা সহায়তা কেন্দ্রে নয়,আসুন ছুটে যাই মহান রবের দরবারে।সালাতে দাড়িয়ে জীবনের সকল অপ্রাপ্তি আর হতাশার কথা শেয়ার করি তাঁর সাথে। জীবন আমাদের সুন্দর এবং আনন্দময় হয়ে উঠবে।হতাশার আঁধার পেরিয়ে জীবন আমাদের অর্থবহ হয়ে উঠবে।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ মুয়াজ
শিক্ষার্থী উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা।
সাবেক শিক্ষার্থী মাদরাসা আবু হুরায়রা রাযিঃ কিশোরগঞ্জ।