আমার আত্মীয় ; আমার ঈমানের অংশ!
পৃথিবী দিনদিন উন্নত হচ্ছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমান সময়কে বলা হচ্ছে (AI) এর যুগ। আজ থেকে বিশ বা ত্রিশ বছর পর পৃথিবী এবং পৃথিবীর মানুষের জীবনযাপন কেমন হবে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। প্রযুক্তি আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে দিয়েছে। পুরো পৃথিবী চলে এসেছে ভার্চুয়াল জগতে, ডিভাইসের স্কীনে।মুহুর্তেই একপ্রান্তে বসে অপরপ্রান্তের খবর নেওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রযুক্তি আমাদের যতটাই কাছাকাছি নিয়ে আসুক না কেন, আমরা একে অপরের থেকে, ছেলে তার মা-বাবা থেকে, ভাই তার বোন থেকে এবং সকল নিকটাত্মীয়ের থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি প্রতিনিয়তই। অনেক দিন পেরিয়ে যায় আমরা নিজেদের আত্মীয় আপনজনের খোঁজ খবর রাখি না।
অথচ আল্লাহ তায়ালার আদেশ এবং রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ ছিল আত্মীয়তার বন্ধনকে রক্ষা করা এবং রক্ষিত বন্ধনকে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন :সম্ভবত ক্ষমতা লাভ করলে তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে! এদের উপরই আল্লাহ তায়ালা অভিসম্পাত করেন। অতঃপর তাদের বানিয়ে দেন বধির ও অন্ধ।
( সূরা মুহাম্মদ -২২,২৩)
অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন: যারা আল্লাহ তায়ালার সাথে দৃঢ় অঙ্গিকারে আবদ্ধ হওয়ার পর চুক্তি ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে সম্পর্কগুলো( আত্মীয়তার সম্পর্ক) বজায় রাখতে বলেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ করে তারাই ( মূলত) ক্ষতিগ্রস্ত। ( বাকারা -২৭)
এবং রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখেরাত দিবসে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার মেহমানকে একরাম করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে।( বুখারী-৪৮৩০)
আরো বলেন: আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ( মুসলিম -২৫৫৬)
এছাড়াও অসংখ্য আয়াত ও হাদীসে আত্মীয়তা রক্ষা এবং ভঙ্গ করা নিয়ে আলোচনা এসেছে। যা এই ছোট্ট প্রবন্ধে আমরা উল্লেখ করছি না।
আমরা কাদের সাথে বন্ধন রক্ষা করব!?
১: এমন আত্মীয় যাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো। তাদের সাথেও সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে।
২: যারা সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের সাথেও রক্ষা করতে হবে।
এসম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ ছিল; তিনি বলেন : সে ব্যক্তি বন্ধন রক্ষাকারী নয়, যে কেবল ঐ ব্যক্তির সাথেই সম্পর্ক বজায় রাখে, যে তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে । বরং প্রকৃত সম্পর্ক রক্ষাকারী হল সেই ব্যক্তি, যে কেউ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে তা কায়েম করে।
( বুখারী-৫৯৯১)
আর আত্মীতার বন্ধন রক্ষা করে চলা এটা ছিল আমাদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম একটি আদর্শ। যেমনটা আমরা দেখতে পাই যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম ওহীর ভারে কম্পমান হয়ে মহীয়সী খাদিজার কাছে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন তখন তিনি শান্তনা দিয়ে বলেছিলেন : আল্লাহর শপথ! তিনি কিছুতেই আপনাকে অসম্মান করবেন না, কারণ আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন এবং..........। ( বুখারী-৩)
অতএব মুসলিম ভাই- বোন! চলুন আমরা নিজেদের ঈমানের যত্ন নিই।আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে চলি।যা আমাদের ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতেই কল্যাণ বয়ে আনবে। প্রযুক্তির এই যুগে আরো কাছাকাছি হই।সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়াই।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ মুয়াজ
শিক্ষার্থী উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা।
সাবেক শিক্ষার্থী: মাদ্রাসা আবু হুরায়রা রা. কিশোরগঞ্জ